ঢাকা,সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

নৌপথে মাতামুহুরী ভ্রমণ আকর্ষনীয় হয়ে উঠছে

এম.জাহেদ চৌধুরী, চকরিয়া ::

কিছু কিছু সৌন্দর্য্য থাকে যা অবলোকন করা যায়, যার বর্ণনা মনের ফ্রেমে বেঁধে রাখা। চোখে সামনে ভাসতে দেখা যায় সেসব সৌন্দর্য্য। ঘুরে ফিরে শুধু এই কথা গুলোই বলতে হয়- বর্ণনাতীত, বিস্ময়কর, অপার্থিব, অপরূপ, অভূতপূর্ব, অলৌকিক, অবিশ্বাস্য ইত্যাদি !

পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নেমে আসা ঝিরি নদীতে ঝর্ণা ধারার শব্দ, উৎপাদিত ফসল-বাঁশ-গাছ, বেত, মাছ, শসা, পেপে, কলা বয়ে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য বেশ উপভোগ্য। যার পুরোটাই বহমান মাতামুহুরীকে কেন্দ্র করে। তাই এখন ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে আর্কষনীয় হয়ে উঠেছে নৌকা পথে মাতামুহুরী ভ্রমণ।

শ্রীদুল, রতন, নন্দ, মুকুল, নারায়ন, রনজিত, মিন্টু ও অনুকুলসহ আট জনের একটি দল। তারা বের হয়েছেন মাতামুহুরী নদীর সৌর্ন্দয্য অবগাহণে। কয়েকদিন আগে চকরিয়া উপজেলার কাকারা ইউনিয়নের মাঝের ফাঁড়ি গিয়ে দেখা মেলে এই দলের সাথে।

তারা জানান, প্রথমে কক্সবাজার যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও পরে সেই সিদ্ধান্ত বদলে নৌ পথে মাতামুহুরী হয়ে লামা পর্যন্ত যাবার সিদ্ধান্ত নিই। সেজন্য আমরা কয়েকদিন আগে থেকে প্রস্ততি নেয়া শুরু করেছি।

এই দলের এক সদস্য রতন। সম্প্রতি দুবাই থেকে দেশে ফিরেছেন। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দুবাই ছিলাম। বিদেশে থাকা অবস্থায় অনেক কিছু দেখেছি। দেশে ফিরে মাতামুহুরীর সৌন্দর্য্য দেখার প্রবল ইচ্ছে জাগে মনে। তাই বন্ধুদের নিয়ে বেরিয়ে পড়া।

তিনি বলেন, নৌকা পথে মাতামুহুরী ভ্রমণ এবং নৌকায় বসে রান্না-বান্না- এক বিচিত্র ধরনের অভিজ্ঞতা আমাদের। আপন মনে ফিরে যাই ছোট বেলার সেই বনভোজনের স্মৃতিতে।

এই দলের আরেক সদস্য শ্রীদুল, নন্দ ও নারায়ন বলেন, সেদিন ছিলো বন্ধের দিন। সকাল ৮টায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চিরিংগা স্টেশন থেকে চাঁন্দের গাড়িতে চেপে কাকারা ইউনিয়নের মাঝের ফাঁড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিই। মাঝের ফাঁড়ি ঘাট থেকে সকাল ১০টার দিকে লামার উদ্দেশ্যে আমাদের নৌকা ছেড়ে যায়। নৌকা যখন চলা শুরু করলো তখন কি যে ভালো লাগছে তা বুঝানোর ভাষা নেই।

কয়েকজন মিলে নৌকায় বসে রান্না, সঙ্গে চলছে কয়েকজনের বে-সুরা গান। আবার কেউ কেউ চেষ্টায় আছেন মাতামুহুরীর নদীর দু’কুলের সৌন্দর্য্য ধারণে। সমান তালে চলছে ছবি আর ভিডিও ধারণ। এভাবে চলতে থাকলো আমাদের নৌকাটি।

মুকুল ও রনজিত বলেন,নৌকা চলার পথে মাতামুহুরী’র দুই তীওে সবুজের সমারোহ, আদিবাসী নারীদের ¯œানদৃশ্য, নদীর ধারে সারি সারি বৃক্ষের ডালে সংসার পাতা সাদা বকের ডানার ঝাপ্টানি, নদীর জলে জেলেদের মাছ ধরা, ছোট ছোট শিশুদের এলোমলো ছুটে চলা, আকা-বাঁকা নদীর দুই ধারে স্থানীয় বাঙালি নারীদের বাদাম চাষ। এসব দেখতে দেখতে দুপুর ১টার দিকে আমরা লামার নৌ ঘাটে পৌছায়। সেখানে পৌছেই সবাই ফুটবল খেলায় নেমে পড়লাম।

ঘন্টাখানেক ফুটবল খেলে ¯œান শেষ করে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে চকরিয়ার উদ্দেশ্যে ফিরতে শুরু করলো আমাদের বহণকারী নৌকা। মজা আর মাস্তিতে দুপুরের খাবারের কথাই ভুলে গেলো সবাই। বাড়ি পথে ফেরার পথেই টান পড়লো পেটে। হুড়হুড়িয়ে সেরে নিলাম দুপুরের খাবার। বাড়ি পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত ৮টা।

এই ভ্রমণের কাহিনী বলতে গিয়ে অনুকুল বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি কবিতার পংক্তি ধরে বলতে শুরু করে “বহুদিন ধরে বহু ক্রোশ দূরে, বহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘুরে, দেখিতে গিয়াছি পর্বতমালা দেখিতে গিয়াছি সিন্ধু। দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া, একটি ধানের শিষের উপর একটি শিশির বিন্দু”।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত তিন বছর আগে মাতামুহুরী নদী পথে নৌকা ভ্রমণে যাওয়া শুরু করে ভ্রমণ পিপাসুরা। এরপর থেকে নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষেরা মাতামুহুরী নদী পথের এই ভ্রমণকেই আর্কষনীয় ভাবছে। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে নদী পথে ভ্রমণের জন্য বের হয় বেশি মানুষ। দিন দিন যেন মাতামুহুরী নদী ভ্রমণ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।

স্থানীয় নৌকার মাঝি বেলাল উদ্দিন বলেন, আগে শুধু বাঁশ, গাছ, নানা ধরনের সবজি বান্দরবানের গহীন এলাকা থেকে আনতে নৌকা ভাড়া করতো ব্যবসায়ীরা। গত কয়েক বছর ধরে দেখছি নৌকা নিয়ে ভ্রমণের দৃশ্য। বিশেষ করে শীত মৌসুমে ভ্রমণ পিপাসুর সংখ্যা বেশি।

তিনি আরো বলেন, আমরা মাঝের ফাঁড়ি থেকে আলীকদম আসা-যাওয়ার জন্য ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত বোট ভাড়া নিই। আর গন্তব্য যদি লামা হয় তাহলে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া নিয়ে থাকি।
কীভাবে যাবেন- চকরিয়া পুরনো বাস স্টেশন থেকে ম্যাজিক গাড়ি (চাঁন্দেও গাড়ি),সিএনজি চালিত টেক্সি অথবা টমটমে করে কাকারার মাঝের ফাঁড়ি যেতে হবে। সেখানে ব্রীজের নিচে বেশ কিছু ইঞ্জিন চালিত নৌকা থাকে। ওইসব নৌকা বান্দরবানের আলীকদম, লামা, পোয়ামোহুরি পর্যন্ত যায়। তবে আগে-ভাগে নৌকা ঠিক করে রাখলে ভালো। নৌকার ভাড়াটা এলাকা অনুসারে নেয়া হয়।

পাঠকের মতামত: